বর্তামানে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মিলনায়তনে শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা এমন একটা সমাজ চাই, যে সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বা নাগরিকদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এদেশের সকল নাগরিকই এদেশের মালিক। আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশ গড়ব। যে সমাজে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাবোধ করে না, সে সমাজকে সভ্য সমাজ বলা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘সনাতন ধর্ম মতে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্য শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিল। যাতে সমাজে সু-শাসন থাকে, আর সু-শাসন থাকলেই মানুষের আত্মায় শান্তি মেলে। এখন আমাদের দেশে চলছে দুষ্টের পালন আর শিষ্টের দমন। এখন দেখা যাচ্ছে দাগি আসামি ও খুনিদের জেলখানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে অসহায় ও নিরাপদ মানুষদের জেলখানায় আটকে রাখা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও দুঃখ প্রকাশ করা হচ্ছে মিথ্যা মামলার বিষয়ে, কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে যাদের আটক করা হচ্ছে তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের জামিন হচ্ছে না।’
জি এম কাদের বলেন, ‘আমি মনে করি, বিচারকরা ন্যায় বিচারের জন্য শপথ নিয়েছেন। তাই, তারা ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন। যাকেই সরকারের কঠিন প্রতিপক্ষ মনে করা হচ্ছে তাদেরকেই এধরণের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। এভাবেই সাধারণ মানুষকে দমন করা হচ্ছে। দেশে দুর্নীতি কমেনি। কিছুদিন আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব অভিযোগ করেছেন অন্তত সরকারের ৮ জন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে। পোস্টিং দিয়ে, পদোন্নতি দিয়ে এবং বিভিন্নভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে ওই উপদেষ্টারা শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। টাকা ছাড়া দেশে কোনো কাজই হয় না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চেয়েছিলাম, আমরা একটি সুন্দর দেশ চেয়েছিলাম। আমরা অভিযোগ পাচ্ছি, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চলছে, বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হচ্ছে। হিন্দুদের ওপর আগেও অত্যাচার ও নির্যাতন চলেছে। তখন তারা একটি জায়গায় বিচার চাইতে পেরেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গিয়ে তারা আশ্বস্ত হতে পারত। এখন হিন্দু সম্প্রদায় বিচার চেয়ে আশ্বস্ত হতে পারছে না। মানুষ যতটা অত্যাচারিত তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভীত ও সন্ত্রস্ত। শুধু হিন্দুরাই নয়, দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘আমাদের রাজনীতিকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। জাতীয় পার্টির যেসব নেতার কারণে দেশের মানুষ আমাদের দোসর বলে আখ্যা দেয়, সেই নেতারাই এখন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জি এম কাদের বিহীন জাতীয় পার্টি গড়তে চায়। আমি সরকারের সকল অপকর্মের সমালোচনা করছি, তাই সরকারের একটি অংশ জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতাদের লাঙ্গল প্রতীক দিতে চাচ্ছেন বলে আমাদের দল থেকে বহিষ্কৃত নেতারা বলে বেড়াচ্ছেন। আমাদের সৌভাগ্য জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে। কিছু ভাড়াটে লোকজন নিয়ে এবং গঠনতন্ত্র অমান্য করে কাউন্সিল করলেই দলের নেতৃত্ব পাওয়া যায় না। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরাই জাতীয় পার্টি হিসেবে নিবন্ধিত। দলীয় ফোরামে কথা না বলে তারা বহিষ্কৃতদের একত্রিত করে সরকারের একটি অংশের সহায়তায় জি এম কাদের বিহীন জাতীয় পার্টি গড়তে চাচ্ছে। যা কখনই সফল হবে না।
তুষার ঘোষের সভাপতিত্বে ও সুরেশ মণ্ডল মানিকের সঞ্চালনায় এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন, জাতীয় পার্টি মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ এর সভাপতি অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, যুব ইউনিটের সভাপতি শিবু সাহা, সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুমন কুমার রায়, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল দাস, বাংলাদেশ ভক্ত সংঘ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অনিল পাল, জাতীয় হিন্দু মহাসংঘের উপদেষ্টা কৃষ্ণ নন্দি, মানবাধিকার নেত্রী সুমা বড়াল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিন, আখতার হোসেন দেওয়ান, চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী, দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম।