রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল সাজেকে জুম ফসলে ইঁদুরের ভয়াবহ উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এতে কয়েক হাজার জুমিয়া পরিবারের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। ফসল ঘরে তোলার আগেই ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর খাদ্যনির্ভরতা ও জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পার্বত্য রাঙামাটির অনেকাংশের মানুষের জীবিকা ও খাদ্যের প্রধান উৎস হলো জুম চাষ। প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে জমি নির্ধারণ ও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গল পরিষ্কার করার পর মার্চ-এপ্রিলে আগুন দিয়ে জুমচাষের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। মে মাসে বৃষ্টি শুরু হলে ধান, কুমড়া, পেঁপে, হলুদসহ নানা ধরনের ফসল বপন করা হয়। এই ফসল সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ঘরে তোলা হয়।
তবে এবছর সাজেক ইউনিয়নের শিয়ালদাই, লুইপাড়া, হাচ্চ্যাপাড়া, জামপাড়া, অরুণপাড়া ও লুংতিয়ানপাড়াসহ পাঁচটি গ্রামে ব্যাপক ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইঁদুর প্রতি রাতেই ফসলি জমিতে গিয়ে ধান খেয়ে ও গাছের গোড়া কেটে নষ্ট করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এতে এখন পর্যন্ত ২৩২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
শিয়ালদাই মৌজার হেডম্যান জৈইপুই থাং ত্রিপুরা জানান, তুইচুই, ব্যাটলিংকসহ বিভিন্ন স্থানে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা গেছে। অনেক জায়গায় ধানে ফুল এসেছে, কোনো জায়গায় শীষ। তার আগেই ধান কেটে খেয়ে ফেলছে ইঁদুর। এতে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, বর্তমানে পাঁচটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার জুম ফসল হারিয়ে বিপাকে পড়েছে। এই ধানই তাদের বছরের খাদ্যের প্রধান উৎস।
এর আগেও ২০২২ সালে সাজেকে এমন ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছিল, যেখানে পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বাঘাইছড়ি সফরে গেলে স্থানীয়রা বিষয়টি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার আশ্বাস দেন।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, আমার কাছে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আসেনি। তবে বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বছর রাঙামাটিতে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে জুম ধানের আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার টন চাল। শুধু বাঘাইছড়ি উপজেলাতেই ১,৫৪৭টি পাহাড়ি জমিতে জুম আবাদ হয়েছে। এই অবস্থায় ইঁদুরের উপদ্রব জুম উৎপাদনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।