• ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একটি সামরিক নেটওয়ার্ক তৈরি করছে চীন গোপনে প্রশান্ত মহাসাগরে

gazette
প্রকাশিত এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ১২:১০ অপরাহ্ণ
একটি সামরিক নেটওয়ার্ক তৈরি করছে চীন গোপনে প্রশান্ত মহাসাগরে
সংবাদটি শেয়ার করুন....

একটি বাণিজ্যিক বিমান থেকে জরুরি রেডিও সম্প্রচার ছিল প্রথম সতর্কবার্তা। যেখানে বলা হয়েছিল, চীনা সরকার অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে তাদের বিমান পথে লাইভ-ফায়ার মহড়া শুরু করতে চলেছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয় এবং বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারীরা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ৪৯টি বাণিজ্যিক ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করে যাতে তাদের কোনো ক্ষতি না হয়। চীনের পর্যবেক্ষক এবং সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ২১শে ফেব্রুয়ারির ঘটনা- যা ক্যানবেরা এবং ওয়েলিংটনের কর্মকর্তাদের বিচলিত করেছিল। এটি প্রশান্ত মহাসাগরে বেইজিংয়ের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার একটি ঝলক মাত্র। প্রাগভিত্তিক গবেষণা গোষ্ঠী সিনোপসিসের এপ্রিলের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) কমপক্ষে ১০টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশে ‘দ্বৈত-ব্যবহারের’ সমুদ্রবন্দর, বিমানঘাঁটি এবং টেলিকম নেটওয়ার্ক নীরবে গড়ে তুলছে, যা প্রায় ৩,০০০ মাইল জুড়ে বিস্তৃত। সেইসঙ্গে হাওয়াই থেকে মাত্র ২,৫০০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে পলিনেশিয়ার আমেরিকান সামোয়া অঞ্চল এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কৌশলগত নেটওয়ার্ক তৈরি করছে।

সিনোপসিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়ন সহায়তা প্রদানের উদ্দেশে তৈরি, দ্বৈত-ব্যবহারের এই অবকাঠামোগুলো ‘এক মুহূর্তের নোটিশে’ সামরিক ব্যবহারের জন্য উল্টে দেয়া যেতে পারে। এটি পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-কে তাদের দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে একটি প্রস্তুত লজিস্টিক চেইন প্রদান করে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, চীনের গোপনে এই নেটওয়ার্ক তৈরি ওয়াশিংটন, ক্যানবেরা এবং টোকিওতে সতর্কতা জোরদার করবে এবং দ্বীপ সরকারগুলোকে সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞা বিবেচনা করতে বাধ্য করবে।

মার্কিন কমান্ডাররা প্রশান্ত মহাসাগরীয় শক্তি পরিমাপ করেন তিনটি প্রতিরক্ষামূলক আর্ককে নিয়ন্ত্রণ করে, যা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। প্রথম দ্বীপ শৃঙ্খল-জাপান তাইওয়ান এবং ফিলিপাইনের মধ্য দিয়ে চীনের উপকূলের কাছে তার বাহিনীকে ঘিরে রেখেছে। দ্বিতীয় দ্বীপ শৃঙ্খলটি রয়েছে গুয়ামে, যেখানে মার্কিন যুদ্ধাস্ত্র মজুত করা হয়। হাওয়াই থেকে আমেরিকান সামোয়া এবং ফিজি পর্যন্ত দক্ষিণে বিস্তৃত, তৃতীয় শৃঙ্খলটি এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকাকে সংযুক্ত করে এমন সমুদ্র পথগুলোকে রক্ষা করে।পশ্চিমা পরিকল্পনাকারীদের মতে, বেইজিংয়ের কৌশল হলো প্রথম শৃঙ্খলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার অস্বীকার করা, দ্বিতীয় শৃঙ্খলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং তৃতীয় শৃঙ্খলে অবাধে কাজ করা। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘বেসামরিক’ সুযোগ-সুবিধা স্থাপনের ফলে পিএলএ প্রথম দুটি দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে, কোনও বিমানবাহী জাহাজ ছাড়াই। Exhibit A হল ভানুয়াতুর লুগানভিল ওয়ার্ফ, যা তৃতীয় শৃঙ্খলের পাশে অবস্থিত একটি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ। অস্ট্রেলিয়া থেকে ১,০০০ মাইলের কিছুটা উত্তর-পূর্বে অবস্থিত, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন নৌবাহিনীর একটি প্রধান ঘাঁটি ছিল। ২০১৪ সালে ৯৭ মিলিয়ন ডলারের চীনা ঋণের ফলে এই ঘাঁটিটি এখন ৩৬১ মিটার (০.২২ মাইল) পর্যন্ত লম্বা , যা ক্রুজ লাইনার চলাচলের জন্য যথেষ্ট বড়। তবে গুরুত্বপূর্ণভাবে, সরবরাহকারী ও ডেস্ট্রয়ার জাহাজও অনায়াসেই যাতায়াত করতে পারে। সিনোপসিস অনুসারে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, স্থানীয়রা পিএলএ নৌবাহিনীর মতো পোশাক পরা লোকদের লুগানভিলের বিমানবন্দরের পেছনে জমি পরিষ্কার করতে দেখেন। গবেষক দলটি সতর্ক করে দিয়েছে যে লুগানভিলে গড়ে ওঠা চীনা ফাঁড়ি পিএলএকে কাছাকাছি জলসীমায় যৌথ সামরিক মহড়া পর্যবেক্ষণ করার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বিমান ও সমুদ্র পরিবহনকে ব্যহত করতে পারে।