মুসলিম বন্দীদের জন্য রাশিয়ার কিছু কারাগার বসবাসের উপযুক্ত নয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, এসব কারাগারে রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্দীদের খাবার খাওয়া ও শয্যা ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এতে প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করা তাঁদের সম্ভব হয় না। পবিত্র রমজানে তাঁদের কারও কারও রোজা রাখাও কঠিন।
তবে কারাগারের কর্মীদের শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা চলছে। জাতিগত তাতার আজাত গাউনুতদিনভ এ প্রসঙ্গে বলেন, তাঁদের (কারাকর্মী) ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো শেখানো উচিত। (কেননা) যাঁদের সঙ্গে তাঁরা কাজ করেন, সেই (মুসলিম) বন্দীদের মানসিকতা জানা দরকার। তাঁদের কারও কাছে শুধু একটি প্রার্থনাই (যেমন নামাজ) ‘চরমপন্থা’র প্রকাশ।
আজাত গাউনুতদিনভ কারাগারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং মুসলিম বন্দীদের অধিকার পর্যবেক্ষণকারী একটি সংগঠনের যাত্রা শুরু করেছিলেন। সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট কাভকাজস্কি উজেলকে ২০২০ সালে এ কথা বলেছিলেন তিনি।
মুসলিম বন্দীদের সঙ্গে আচরণের ধরন কখনো কখনো কারাগারবিশেষে ভিন্নও হয়ে থাকে, যেমন মিনুসিনস্ক কারাগারের তত্ত্বাবধায়কেরা কিছুটা নম্র প্রকৃতির ছিলেন। সাজার বেশির ভাগ সময় এ কারাগারেই ছিলেন ক্রিমীয় তাতার নেতা ঝেলইয়াল।
এই নেতা ও কারাগারটির অন্য মুসলিম বন্দীরা নামাজ আদায় ও পবিত্র রমজানে নিজেদের শয্যাতেই খাবার খাওয়ার সুযোগ পেতেন। এমনকি পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত এবং কারাগারের গ্রন্থাগার থেকে অন্যান্য ধর্মীয় বইপুস্তক পড়ারও সুযোগ পেতেন।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, রাশিয়ার অন্যান্য কারাগারে পবিত্র কোরআন ও আরবি ভাষা নিষিদ্ধ। কিছু ধর্মীয় গ্রন্থ পাওয়া গেলেও সেগুলো রুশ ভাষায় অনূদিত।
ঝেলইয়ালের তথ্য অনুযায়ী, মুসলিম বন্দীরা কারাগারের অন্য বন্দীদের মতো সিগারেট, মুঠোফোন, মদ ও নেশাজাতীয় অন্যান্য মাদকদ্রব্য চোরাচালানে যুক্ত নন।
রাশিয়ার কারাগারগুলোতে ২০০০–এর দশকের প্রথম দিক থেকে বাড়তে শুরু করে মুসলিম বন্দীদের সংখ্যা। ওই সময় চেচনিয়ায় রুশ বাহিনীর সঙ্গে মুসলিম চেচেন বিদ্রোহীদের দ্বিতীয়বারের মতো লড়াই শুরু হয়।
ক্রেমলিন এই মুসলিম বিদ্রোহীদের ‘উগ্রপন্থী’ আখ্যা দিয়ে থাকে। নতুন করে লড়াই শুরুর পর নর্থ ককেশাস অঞ্চলের মুসলিম–অধ্যুষিত অন্য প্রদেশগুলো, বিশেষ করে দাগেস্তানে শুরু হয় সরকারের দমনাভিযান। গ্রেপ্তার করে কারাগারে ভরা হয় হাজার হাজার মুসলিমকে।